ক্লাস এইটে পড়ে শান্ত। নাম শান্ত হলেও, তাকে অশান্তই দেখতে লাগে। মাথার বাম পাশে চুল একদম গোড়া থেকে কাটা, আর ডান পাশের চুলগুলো লম্বা হয়ে ঢেকে ফেলেছে কান। যে কয়টা দাড়ি গজিয়েছে, যে কেউ চাইলে গুনে ফেলতে পারবে। এখনই সে 'আগুনের গোলার মতো স্মার্ট পোলা' হিসেবে সবার নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে।
স্কুল মাঠের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে বিড়ি ধরিয়ে লম্বা একটা টান দিলো শান্ত। ধোঁয়ার কুন্ডলী ছাড়ছে শৈল্পিকভাবে। ডাস্টার হাতে ক্লাসে ঢুকার মুখে শান্তর দিকে চোখ পড়লো ইমরান স্যারের। ইমরান স্যার নিজেও বিড়ি খান। বিড়ি খেতে খেতে উনার ঠোঁট জোড়া কালচে হয়ে গেছে। স্কুলে থাকা অবস্থায় টয়লেটে বসে এই বিচিত্র ধোঁয়া বুকে নিতে পছন্দ করেন উনি। মাঝে মাঝে গর্ব করে বলেন, "আমার পেটটা কাটলে খালি ধোঁয়া বেরুবে। ধোঁয়া....." স্মোকিং ফ্রি জোন- এই স্কুল। ইমরান স্যার এটা জানেন ও মানেন!
শান্তর এই অভূতপূর্ব আচরণে অশান্ত হয়ে উঠলেন ইমরান স্যার। তাড়াতাড়ি তিনটে ছবি তুললেন হাতে থাকা স্মার্ট ফোন দিয়ে।
ঘন্টা খানিক পর হেডমাস্টারের রুমে জরুরী মিটিং শুরু হলো। স্কুলের পরিবেশ নষ্ট করছে ছাত্ররা। ব্যবস্থা নিতে হবে। মিটিংয়ের আলোচনা পর্বে সিনিয়র টিচার জনাব আব্দুর রাজ্জাক স্যার বলে বসলেন,
"স্যাররা যদি বিড়ি টানতে পারে, তাইলে পোলাপানে বিড়ি টানলে সমস্যা কোথায়?........"
মৃদু গুঞ্জন শুরু হলো। ইমরান স্যারের ঠোঁট জোড়া আরো কালো হয়ে উঠলো। তিনি টেবিল চাপড়ে বলে উঠলেন, "নো, শিক্ষক একটা কিছু করলেই, সেটা ছাত্র করতে পারে না.....
আমি তো বিয়ে করছি, ছাত্র কি এখন বিয়ে করতে পারবে?....."
সৃষ্ট গরম পরিস্থিতিতে রঞ্জন স্যার ঠান্ডা জল ঢাললেন এই কথা বলে,
"শান্ত কিন্তু বিবাহিত। এই তো আসছে ১৪ ফেব্রুয়ারি ওর বিবাহ বার্ষিকী.... "
পিনপতন নীরবতা। ইমরান স্যারের ঠোঁট জোড়া মনে হয় কেউ আঠা দিয়ে আটকিয়ে দিয়েছে। কোনো শব্দ বেরুচ্ছে না তার।
ওয়াদুদ খান
১৬ নভেম্বর, ২০১৬
সদরপুর, ফরিদপুর
কবি ও কথাশিল্পী
লেখককের ফেসবুক পেজ পেতে ক্লিক করুন নিচের লিংকে:
'ওয়াদুদ খান'- এখানে
কবি ও কথাশিল্পী |
'ওয়াদুদ খান'- এখানে
No comments:
Post a Comment