• This is default featured slide 1 title

    Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

  • This is default featured slide 2 title

    Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

  • This is default featured slide 3 title

    Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

  • This is default featured slide 4 title

    Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

  • This is default featured slide 5 title

    Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Showing posts with label কলাম. Show all posts
Showing posts with label কলাম. Show all posts

Car Crash Takes a Heavy Toll



---- By Wadud Khan

DEMANDING  ‘safety roads’ has become a common expectation in Bangladesh for all walks of life irrespective of caste, creed, religion and political parties. Each year innumerable innocent people are falling a great victim to car crash. No measure is still looking effective to prevent such devastating incidents. No light of hope is still vivid in the gloomy sky of Bangladesh regrading road accidents.

There are many reasons to cause road accidents. Reckless driving is one of the most fatal causes of it. Narrow roads, disobeying traffic rules, lack of proper training for driving, unnecessary overtaking tendency, mismanagement in highways are also responsible for car crashes. Some motor-bikers look desperate while driving in the busy roads. 

If we closely imagine how much sufferings are brought about by road accidents, we cannot but shed our tears silently. Many people have become crippled, many wives have become widows, many innocent kids have become orphans, many parents have lost their only child and become hopeless due to road accidents. Man must die today or tomorrow. There is no way to escape death. But as a human being, everybody wants to die a natural death. No unnatural death is acceptable to anybody. But who cares?

There are some laws regarding road accidents but no drivers, passersby is willing to follow the existing laws. Some experts and researchers like Illias Kanchon propose many ideas to decrease road accidents and lessen the loss of it. The general people are quite ignorant of traffic rules. That’s why they do not abide by the rules. Even in many cases, the helpers of a car often drive in absence of the main drivers.
Some days ago, in August, 2018, many school children throughout the country have come out of their classrooms to protest against road accidents because their two classmates have been killed by a careless driver. The guardians, university students also support their non-violent movement. The school kids stand on the highways and check many cars and find out that most of the cars have no fitness, no road permission, no driving licenses. Even the Members of Parliament, govt officials, actors or actresses, intellectuals, journalists do not abide by the traffic rules. The whole nation becomes speechless to see the terrific situation of the traffic. In spite of having a lot of over bridge in Dhaka or other mega city, the common people are very reluctant to use that to avoid road crashes.     

A new law has recently been passed to lessen the road accidents and to ensure the safety roads. This law will also control the unlawful activities of the drivers and the car-owners. It will ensure severe punishment for those who intentionally cause road accidents. Though the law is now active, road accidents still continue. Even yesterday, on 25 August, 2018, at least 25 people have been killed and many were severely injured due to several road crashes all over the country. No laws can save us if all kinds of people do not become aware of the severe sufferings of road accidents. We all are waiting for a better Bangladesh having safety roads.

Share:

একালের সেকেলে শিক্ষক : প্রতি পদে বঞ্চনা | ওয়াদুদ খান




সম্প্রতি (০৪ জুন ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে "সরকারি টেলিফোন, সেলুলার, ফ্যাক্স ও ইন্টারনেট নীতিমালা, ২০১৮" শিরোনামে একটি সময়োপযোগী নীতিমালা জারি করা হয়েছে। সঙ্গত কারণেই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা (বর্তমানে 'কর্মকর্তা' শব্দটি আর ব্যবহার করা হচ্ছে না। একারণে কর্মকর্তার স্থলে ইচ্ছে করেই 'কর্মচারী' লেখা হয়েছে।) এতে খুশি হয়েছেন। কেননা, গ্রেড-১ থেকে শুরু করে গ্রেড-৯ পর্যন্ত সরকারি কর্মচারীরারা মাসিক "মোবাইল ও ইন্টারনেট ভাতা" পাবেন। এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তর, পরিদপ্তরের প্রধানগণ। সবই শুভ উদ্যোগ। সরকার নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
বরাবরের মতো এই নীতিমালাতেও উপেক্ষিত থেকে গেছেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মচারীবৃন্দ। অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ  ও অধ্যাপক ছাড়া শিক্ষা ক্যাডারের আর কোনো কর্মচারী এই সুবিধা পাবেন না। কারণ, তাঁরা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নন। অথচ, অন্যান্য ক্যাডারের ক্ষেত্রে এই সুবিধা পাচ্ছেন গ্রেড-৭ থেকে গ্রেড-৯ এর কর্মচারীগণ। যেমন: উপজেলা পর্যায়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এই সুবিধা পাচ্ছেন, কেননা তাঁর একটি অফিস রয়েছে যদিও তাঁর বেতন গ্রেড-৯।
যেহেতু ক্যাডার শিক্ষক কর্মচারীদের নিজস্ব কোনো অফিস নেই, তাই তাঁরা গ্রেড-৫ কিংবা গ্রেড-৬ এর কর্মচারী হয়েও "মোবাইল ও ইন্টারনেট ভাতা" প্রাপ্য হবেন  না। একটি সরকারি কলেজে ২০০জন শিক্ষক কর্মচারী (ক্যাডার শিক্ষক) কর্মরত থাকলেও অফিস পরিচালনা করে থাকেন মাত্র দুজন- অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ। কাজেই এই দুজন কর্মচারী ও পদমর্যাদার কারণে অধ্যাপকদের উপরিউক্ত সুবিধা প্রদানই কর্তৃপক্ষের নিকট যথেষ্ট মনে হয়েছে।
শিক্ষকদের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে পাঠদানে দক্ষ করার মানসে সরকার আইসিটি কোর্সের পেছনে  ইতোমধ্যে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে। অথচ, শিক্ষকদের একটি করে আধুনিক ল্যাপটপ কিনে দিতে পারেনি। শিক্ষকদের ল্যাপটপ নেই, ট্যাবলেট পিসি নেই, এমনকি অনেকের মোডেম কিংবা স্মার্ট ফোনও নেই। অথচ, কোনও কোনও শিক্ষক তিন-চারবার আইসিটি ট্রেনিং সম্পন্ন করে ফেলেছেন।
শিক্ষকদের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে পাঠদানে দক্ষ করার অভিপ্রায়ে প্রায়শ বলা হয়ে থাকে, "একজন শিক্ষক হবেন পুরোপুরি ডিজিটাল। তিনি গুগলে সার্চ দিয়ে বের করে আনবেন হালনাগাদ কিন্তু সঠিক ও নির্ভুল সকল তথ্য। তিনি ইউটিউবে সার্চ দিয়ে ডাউনলোড করে নিবেন তার প্রয়োজনীয় ভিডিও ম্যাটেরিয়ালস। ভিডিও এডিটিং, কাটিং, পেস্টিং খুব সুন্দর করে শিখে নিবেন। একজন শিক্ষক মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্টে হবেন সুদক্ষ। ক্লাসরুমে বড়ো মনিটরে ক্লাস নিতে পারঙ্গম হবেন একজন শিক্ষক কর্মচারী।"
আইসিটি ট্রেনিংয়ের কল্যাণে অনেক শিক্ষক যুগোপযোগী ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করে ইতোমধ্যে সাড়াও ফেলেছেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো- সরকার শিক্ষকদের "মোবাইল ও ইন্টারনেট ভাতা" থেকে উপরিউক্ত নীতিমালায় বঞ্চিত করেছে।
আমরা যদি একটু গভীরভাবে অনুধাবন করি, তাহলে দেখতে পাবো- থানার একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) চেয়ে একজন শিক্ষকের মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার কম প্রয়োজনীয় নয়। একজন শিক্ষককে যোগাযোগ রক্ষা করতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে।
একজন শিক্ষক কেন নিজ পকেটের টাকা খরচ করে গুগলে ঢুকবেন, ইউটিউবে সাঁতরাবেন, রাত জেগে ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করবেন, যেখানে সেই শিক্ষকটিকে দেয়া হয়নি একটি ল্যাপটপ, ট্যাবলেট কিংবা কম্পিউটার? আবার শিক্ষকদের বাড়তি উৎসাহ দেওয়ার জন্য দেয়া হচ্ছে না "মোবাইল ও ইন্টারনেট ভাতা"।
শিক্ষকদের কর্ম পরিবেশের বৈশিষ্ট্যই এমন যে, সবাই একই সাথে অফিস প্রধান হবেন না। সবার অফিস থাকা জরুরিও নয়। এর মানে নয় যে তাঁদের মোবাইল ও ইন্টারনেট চালানোর প্রয়োজন নেই।
আশাকরি, আমার লেখাটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসবে এবং তাঁরা দ্রুততম সময়ে নীতিমালাটির সংশোধনী এনে সকল শিক্ষক কর্মচারীদের "মোবাইল ও ইন্টারনেট ভাতা" প্রদান করা হবে।
ভুলে গেলে চলবে না, এটি শিক্ষকদের প্রতি কোনো দয়া নয়; বরং তাঁদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার।
আর কতকাল হাজারো বঞ্চনার শিকার একালের শিক্ষকরা থেকে যাবেন সেকেলে?

ওয়াদুদ খান
প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ
সদরপুর সরকারি কলেজ, ফরিদপুর 

Share:

ক্যাডার শিক্ষকরা কাজ করেন না! (অভিযোগ খণ্ডন)


কিছু কথিত বুদ্ধিজীবী, অবশ্য তাদেরকে টকশোজীবী বলাই বেশি শ্রেয়, বিভিন্ন টকশোতে গিয়ে ঢালাওভাবে বলে থাকেন সরকারি কলেজ শিক্ষকরা দুপুর বারোটার পর কলেজে থাকেন না। কেউ কেউ আরও বাড়িয়ে বলেন, ওনারা সপ্তাহে দুদিন আসেন, পাঁচদিন ঘুমান। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ক্যাডার শিক্ষক কর্মকর্তাদের মাস শেষে বেতন উত্তোলন করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। আহ, কী আরাম শিক্ষকদের!

অথচ, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুয়া, ভিত্তিহীন, অজ্ঞতাপ্রসূত, কিছু কিছু ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জনসাধারণের মনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবেই কিছু বুদ্ধিজীবী (?) এসব অভিযোগ করে থাকেন। বিবেকের দায়বোধ থেকে এসব অভিযোগ খণ্ডনের জন্য কলম ধরলাম।

বেশিরভাগ সরকারি কলেজ বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত। অনেকে কলেজে বারো থেকে ষোলোটি বিষয়ে অনার্সসহ মাস্টার্স পড়ানো হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাসের জন্য অতিরিক্ত পারিশ্রমিক না দেয়া সত্ত্বেও, বিজ্ঞ শিক্ষকবৃন্দ সেখানে স্বেচ্ছায় ক্লাস নিয়ে থাকেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বছরজুড়ে পরীক্ষা নিয়ে থাকে। কাজ চলে ভর্তি ও ফরম পূরণের। তাদের পরীক্ষার নিয়মিত রুটিন হলো- দুপুর ২.০০টা থেকে বিকেল ৫.০০টা পর্যন্ত। এছাড়াও বিজ্ঞান বিভাগের প্র‍্যাক্টিক্যাল ক্লাসগুলো সাধারণত বিকেলে হয়ে থাকে।

অভ্যন্তরীণ সকল পরীক্ষা, উচ্চমাধ্যমিক বোর্ড পরীক্ষা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাস-কোর্স, অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষার সকল খাতা গভীর রাত জেগে মূল্যায়ন করে থাকেন সরকারি কলেজের শিক্ষকবৃন্দ।

একটি ক্লাস নিতে যদিও বাহ্যত এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে, সেই একটি মানসম্মত ক্লাস তৈরির জন্য একজন প্রাজ্ঞ শিক্ষককে ক্লাসের বাইরে খাটতে হয় বেশ কয়েক ঘণ্টা। গভীর রাতেও। যেমন, লেসন প্লান করা, ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করা, ক্লাস টেস্ট নেয়ার জন্য প্রশ্নপত্র তৈরি করা, সাজেশন তৈরি করা ইত্যাদি।

ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্টের তকমা পড়ানো থাকলেও, কার্যত শিক্ষকরা কোনো ছুটিই ভোগ করতে পারেন না। মাঝেমাঝে শুক্রবারেও বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা কিংবা চাকরি পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করতে হয়। 

গ্রীষ্মকালীন অবকাশে উচ্চমাধ্যমিক বোর্ড পরীক্ষা পরিচালনা করতে হয়। শীতকালীন অবকাশে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফরম পূরণের দায়িত্ব পালন করতে হয়। সারা রমযান মাসজুড়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেশনের, বিভিন্ন বর্ষের নানা পরীক্ষা লেগে থাকে।

এছাড়াও বিজ্ঞ ক্যাডার শিক্ষকগণ বছরে বায়ান্নটি শনিবার বেশি শ্রম দেন। এজন্য বাড়তি সম্মানী তারা কখনো পান না। যেখানে প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য সকল কর্মচারী সপ্তাহে দুদিন ছুটি পান, সেখানে শিক্ষকসম্প্রদায় ছুটি পায় মাত্র একদিন।

এছাড়াও সকল জাতীয়দিবসে শিক্ষকদের স্বস্ব কলেজে উপস্থিত থেকে দিবসটি উদযাপন করতে হয়। এমনকি দিবসটি শুক্রবারে হলেও। 

যেকোনো জাতীয় নির্বাচনকালে জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করতে হয় ক্যাডার শিক্ষক কর্মকর্তাদের। ইতোমধ্যে দায়িত্ব পালনকালে অনেকে পটল তুলেছেন। সংখ্যাটা নেহায়েত কম নয়। 

সম্ভবত বুদ্ধিজীবী কিংবা টকশোজীবীরা তাঁদের এলাকার বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের কলেজে শিক্ষকতা করার পাশাপাশি মুদি-দোকান, ওষুধের ফার্মেসি, হোমিওপ্যাথির প্র্যাকটিস, বইয়ের দোকান, রাজনীতি- ইত্যাদি করে দেখতে অভ্যস্ত। তাঁদের সাথে সরকারি কলেজের ক্যাডার শিক্ষকদের গুলিয়ে ফেলেছেন। মনে রাখতে হবে- তেল ও জল এক নয়। 

"শিক্ষকতা পেশা আরামের। এখানে কোনো কাজ নেই।"  এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ করে মূলত ক্যাডার শিক্ষকদের চলমান ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন ও দাবিসমূহকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার এক সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য রয়েছে। চক্রান্তও বটে।

ওয়াদুদ খান
প্রভাষক, ইংরেজি
সদরপুর সরকারি কলেজ, ফরিদপুর
০১৭৮৫-৫৬২০৮০
Share:

"স্রষ্টা কি আছে? স্রষ্টা কি নেই?"- আদিমতম প্রশ্ন

আচ্ছা, মানুষ মরার পরে কী হয়?
আদিমতম এই প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে নিরন্তর ছুটে চলেছে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। সৃষ্টি লগ্ন থেকেই। কেউ ভাবে- মরার পরে মানুষ গলে যায়, পঁচে যায়, জৈব সার হয়। মানুষ বেঁচে থাকে অন্য মানুষের অন্তরে। তাদের কাজের কারণে নামটা পেয়ে যায় অমরত্ব। কিন্তু ব্যক্তি মানুষটির কী হয়? কোথায় হারিয়ে যায় সে? সে কি আর কখনো জন্ম নেয়? যারা জন্মান্তরের মিথে (myth) বিশ্বাস করে, তারাও আবার এই মায়াময় পৃথিবীতে জন্ম নিবেন- এটা পুরোপুরি মানতে পারেন না। সন্দেহ জাগে।

কী হয় মরার পরে?
সত্যি সত্যি কি ব্যক্তিটি এই মহাবিশ্বের ধুলিকণা কিংবা জলকণার সাথে বিলীন হয়ে যায়?

মরার পরে আবার কী হয়?
এই প্রশ্নটা মনের গহীনে জাগে না অন্য কোনো প্রাণির। তাই, তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য- ভোগ, ভক্ষন, প্রজনন। অতঃপর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অনন্ত অসীম কালের জন্য হারিয়ে যাওয়া। তাদের জীবন চক্রে তেমন বৈচিত্র্য নেই। তারা বিকশিত হয় না। চিন্তা করবার এই বিস্ময়কর ক্ষমতাও তাদের এতটা নেই। এ কারণে গরু, বাছুর, ভেড়া, বরকি, হাঁস, মুরগি- ওরা মানুষ নামক এই জটিল প্রাণি থেকে অধিক নিশ্চিন্ত ও সুখী। যদিও শিম্পাঞ্জি, বানর, হনুমান কিংবা ডলফিনের বুদ্ধি আছে বলা হয়- মানুষের মতো ওরা বিকশিত হতে পারেনি। পারবেও না।

কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল পৃথিবীর? জলরাশির? ভূমির? পাহাড়ের? পর্বতের? কীভাবেই বা সৃষ্টি হয়েছিল মানুষ নামের এই বিস্ময়কর প্রাণিটির?

একটা 'বিগ ব্যাং' থেকেই কি?
হঠাৎ করে পৃথিবীতে বিশাল একট শব্দ হলো, আর ঝাঁকে ঝাঁকে পয়দা হলো এত এত প্রাণির! তাও আবার জোড়ায় জোড়ায়! এত প্রাণ কীভাবে সৃষ্টি হলো?


আচ্ছা, এই 'বিগ ব্যাং'- এর আগে কী ছিল?
কিছুই কি ছিল না?
কেবল কি শূন্যতা আর শূন্যতাই ছিল?
সেই শূন্যতার সবটা জুড়ে কি কিচ্ছু ছিল না?

যদি কোনো বাহ্যিক শক্তি 'বিগ ব্যাং' ঘটিয়ে থাকে- কে সে জন? কী তার পরিচয়? কেনই বা ঘটালেল মহা বিস্ফারণ, এত প্রাণের সঞ্চার, এত বৈচিত্র?

এই কঠিন কিংবা সহজ প্রশ্নের উত্তর যারা খোঁজে তারা দুই ভাগ হয়ে যায়- কেউ কেউ বলেন, "সেই তো স্রষ্টা আমার। সেই সে জন, যিনি এই পৃথিবীর সবকিছু করেছে সৃজন।" হয়ে উঠে বিশ্বাসী মানব। স্রষ্টার পদতলে নিজেকে করে দেয় সমর্পণ।

আরেক দল বলে, "সব এমনি এমনি হয়েছে। সবই প্রকৃতির লীলাখেলা। ঈশ্বরে বিশ্বাস করে বোকারা। মরার পরে কল্পিত স্বর্গ-নরকে বিশ্বাস করে গাধারা।"

আচ্ছা, মানুষ তো একদিন মরে যাবে এটা তো সত্যি।
পৃথিবীতে কেউ আর দ্বিতীয়বার ফিরে আসেনি, আসবে না- এটাও তো সত্যি।

কোথায় চলে যায় মানুষ?
কার কাছে যায়?
কেন এতোএতো প্রাণির মধ্যে মানুষেরই কেবল থাকল যৌক্তিক চিন্তা করার বিস্ময়কর ক্ষমতা? কেন কেবল মানুষেরই আছে বিবেক, আবেগ, বোধ?
কেন?
কেন?

এইসব কেনর উত্তর খুঁজতে গিয়েও কি স্রষ্টায় অবিশ্বাসী হওয়া যায়?

ভাবো মানুষ!
ভাবো তো!

ওয়াদুদ খান
সদরপুর, ফরিদপুর
মোবাইল: ০১৭৮৫-৫৬২০৮০


Share:

নো বিসিএস, নো ক্যাডার (KNOW BCS, KNOW CADRE)

ফেসবুক খুললেই ইদানীং শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রোফাইলে কিংবা টাইমলাইনে একটি বিশেষ স্লোগান দেখা যায়- যা আমজনতারও নজর কেড়েছে। সেটি হলো- NO BCS, NO CADRE- যার সরলার্থ  'বিসিএস ছাড়া ক্যাডার নয়'।

শিক্ষা ক্যাডার বাদে অপরাপর ক্যাডার কর্মকর্তাদের অনেকে এতদিন জানতেনই না- এই বিচিত্র বঙ্গদেশে বিসিএস পরীক্ষায় না বসেও, নানা ফাঁক ফোকড়ে রাতারাতি ক্যাডার হওয়া যায়।

NO BCS, NO CADRE স্লোগানকে ধারণ করে আমি একটি প্রোফাইল ফ্রেম তৈরি করেছিলাম- যা মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২২০০ কর্মকর্তা তাঁদের প্রোফাইলে সেট করেছিলেন। এমনকি অনেক ছাত্র, দোকানদার, অন্যপেশার লোক, হাইস্কুল ও প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকগণও সেটি ব্যবহার করেছিলেন। অনেকেই তখন ইনবক্সে জানতে চাইতো, "আচ্ছা, নো বিসিএস, নো ক্যাডার- কেন লিখেন? এর মানেই বা কী?" তাদেরকে সংক্ষেপে বলতাম, "KNOW BCS, KNOW CADRE. তাহলেই বুঝবেন আমরা কেন গলা ফাটিয়ে রোজ বলছি NO BCS, NO CADRE."

কয়েক বছর আগের ঘটনা। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা আনতে শিক্ষাবোর্ডে গিয়েছিলাম। কাকতালীয়ভাবে পরিচয় হয়েছিল নগরকান্দা থানার এক বেসরকারি কলেজ শিক্ষকের সাথে। বাসে চেপে একসাথে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত এসেছি। আমাকে সে কি শ্রদ্ধা! সিট কম থাকায় জোর করে আমাকে সিটে বসিয় তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন অনেকক্ষণ। বারবার আফসোস করছিলেন, "জানেন স্যার, বিসিএস ক্যাডার হবার খুব স্বপ্ন ছিল। তিনবার প্রিলিমিনারি দিয়েছি। কিন্তু ভাগ্যের শিকে ছিড়েনি। লিখিত পরীক্ষা পর্যন্ত যেতে পারিনি। আপনাদেরকে দেখলে খুব হিংসে হয়। কত্ত মেধাবী আপনারা!" আমি আন্তরিকভাবে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, "আপনাদের কলেজে নিয়োগ কি ফেয়ার হয়েছিল?" তিনি লম্বা একটা শ্বাস ছেড়ে বললেন, "ফেয়ার! এই দেশে বিসিএসের নিয়োগই একটু ফেয়ার আছে। কলেজের নিয়োগ তো একটা ভাওতাবাজি। এমপি, ম্যানেজিং কমিটি, ডোনেশন- কত কাহিনি।"

তখন আমার মনে একটি স্মৃতি দোলা দিলো। আমি তখন অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে পড়ছি। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাশও করেছি। আমাকে আমার এক আত্মীয় ফোন করে বলল, "ওয়াদুদ, তোমাকে একটা প্রক্সি দিতে হবে।" 'প্রক্সি' শব্দটা শুনে অবাক হয়েছিলাম। পরে উনি আমাকে বুঝিয়ে বললেন, "হয়েছে কি, একটা কলেজে যোগদানের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকার চুক্তি করেছি। কমপক্ষে তিনজনের আবেদন করতে হয়। আমি আছি, আরেকজনকে রেডি করেছি, আর তুমি হলে তিনজন হয়। সবই স্টেজ ম্যানেজড। পরীক্ষার ফি, খরচ, খাওয়া-দাওয়া- সব আমার।"

সেই যোগদান নাটকের মঞ্চায়ন, দৃশ্যায়ন, নিখুঁত অভিনয়- এখনো মানসপটে ভাসে। 

সেদিন রাতে টাঙ্গাইল পুরাতন বাস স্ট্যান্ডে বসে লাল চা খাচ্ছিলাম। আমার পরিচিত এক রাজনৈতিক নেতা- আমাকে দেখে হাসি হাসি মুখ করে বলল, "দশ লাখ টাকা খরচ করে বউকে আপনাদের মতো ক্যাডার বানিয়ে দিলাম।" বিস্তারিত জানতে চাইলে বলল, "তিন বছর আগে দশ লাখ টাকা ডোনেশন দিয়ে বাসাইল মহিলা কলেজে বউকে ঢুকিয়ে দিলাম। এখন তো সেটা সরকারিকরণের তালিকায়। শুনছি ওরাও নাকি ক্যাডার মর্যাদা পাবে।" আমি মজা করে বললাম, "দাদা, আপনি হলেন রাজনীতির ক্যাডার, আর বউ হচ্ছে শিক্ষা ক্যাডার- সবাই ক্যাডার- হা-হা-হা।" 

পরীক্ষা না দিয়ে মোবাইল  টাওয়ার কিংবা এটিএম বুথের গার্ড হওয়া এ দেশে না গেলেও, শিক্ষা ক্যাডার হওয়া যায়। কারও দৃষ্টি এদিকে নেই।

যাহোক, কিছুদিন পর, সেই নগরকান্দার ইংরেজি স্যারের ফোন পেয়েছিলাম। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে ওনি আমাকে জানালেন," স্যার, আমাদের কলেজ তো সরকারি হয়ে গেছে। আমরাও এখন লিখব- বিসিএস সাধারণ শিক্ষা। আচ্ছা স্যার, সত্যায়িত করার একটা সিল বানাতে কত খরচ পড়বে? ইংরেজিতে বানাবো নাকি বাংলায়?" আমি নির্বাক হয়ে শুনে যাচ্ছিলাম। শুধু বললাম, "আপনারা সত্যিই লাকি গো!"

এতক্ষণ আলোচনা শোনার পর আশাকরি বিজ্ঞ পাঠক বুঝতে পেরেছেন- "এই দেশে বিসিএস জিনিসটা কী? আর ক্যাডারই বা কী ?"

ক্যাডার হওয়ার এমন সস্তা ও জনপ্রিয় পথ পৃথিবীর আর কোথাও কি আছে ?

ওয়াদুদ খান 
কবি ও কথাশিল্পী 
সদরপুর, ফরিদপুর 
১৭ নভেম্বর, ২০১৭  
Share:

যে কারণে রোহিঙ্গারা 'মানুষ' নয়!

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর 'মানুষ জাতি' কবিতার শুরুতে বলেছেন,

জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে
সে জাতির নাম মানুষ জাতি;
এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত
একই রবি শশী মোদের সাথী।

এই একই কবিতার আরেক জায়গায় তিঁনি বলেছেন,

দোসর খুঁজি ও বাসর বাঁধি গো,
জলে ডুবি, বাঁচি পাইলে ডাঙা,
কালো আর ধলো বাহিরে কেবল
ভিতরে সবারই সমান রাঙা।

এই সভ্য দুনিয়ায়, যদিও অসভ্যতারই সয়লাভ চারপাশে, মানুষের সবচেয়ে বড়ো পরিচয় সে মানুষ। পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে একজন মানুষও যদি তাঁর মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, তবে সকল দেশের সকল মানুষ তাঁর পাশে দাঁড়াবে। এটাই প্রত্যাশিত। আমেরিকার টুইন টাওয়ারে  যখন হামলা হয়, তখন সারা পৃথিবীতে নিন্দার ঝড় বয়ে গেছে। কারণ, তাঁরা মানুষ ছিল।

নির্যাতিত, নিপীড়িত রোহিঙ্গা

ফ্রান্স যখন আক্রান্ত হয়, তখনো বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে। কারণ, তাঁরা মানুষ। বাংলাদেশের রামুতে যখন বৌদ্ধ মন্দিরে আক্রমণ হয়, তখনো জেগে উঠেছিল দেশ বিদেশের সকল সুশীল। কারণ, বৌদ্ধরাও তো মানুষ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে যখন হিন্দু মন্দির ভাঙচুর করা হয়, তখনো ফুঁসে উঠেছিল সকল সুশীল। কারণ, হিন্দুরাও তো মানুষ। সাঁওতাল, গারো, চাকমা, মনিপুরী- সবাই মানুষ। সবার রক্তই লাল। তাই যখন কোনো মানুষ আক্রান্ত হয়, সে সহানুভূতি পায়। মানুষের পাশে দাঁড়ায় অন্যসব মানুষ।

কবিরা কবিতায় মানুষের কথা বলে। শিল্পী তাঁর গানে মানুষের পক্ষে দাঁড়ায়-

মানুষ মানুষের জন্য
জীবন জীবনের জন্য
একটু সহানুভূতি কি
মানুষ পেতে পারে না?
ও বন্ধু ...
-----------------------------
-----------------------------
মানুষ যদি সে না হয় মানুষ
দানব কখনো হয় না মানুষ
যদি দানব কখনো বা হয় মানুষ
লজ্জা কি তুমি পাবে না?
ও বন্ধু ...

কিন্তু রোহিঙ্গারা? 
তাঁরা কি মানুষ? 
তাঁদের শরীরের রক্ত কি লাল?

মিয়ানমারের শান্তিতে নোবেলবিজয়ী বর্তমান শাসক অং সান সু-চি (অবশ্য বিজ্ঞজনরা তাঁর নতুন নামকরণ করেছেন খুন চান সু-চি ) রোহিঙ্গাদের উপর বর্বরোচিত হামলার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এমন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বিশ্ব কি এর আগে কখনো দেখেছে? একটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে নির্মূল করতে বৌদ্ধভিক্ষুদের সাথে নিয়ে বার্মিজ আর্মিরা রোহিঙ্গাদের ধাওয়া করেছে বছরের পর বছর। নারীদের করছে ধর্ষণ, পুরুষদের করছে কতল। এমনকি শিশুদেরও নির্বিচারে হত্যা করছে বার্মিজ হায়েনারা।

মুসলিম হওয়াই রোহিঙ্গাদের আজন্ম পাপ

যাঁরা জীবন বাঁচাতে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিল, তাঁদের অনেকেরই সলীল সমাধি হয়েছে। এই যে এত নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, ধর্ষণ চলছে তবুও বিশ্ব বিবেক জাগছে না। বরং পত্রিকার পাতা উল্টালে দেখতে পাই, ভারতের নরেন্দ্র মোদী, চীনের হু জিনতাও, রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন, আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইংল্যান্ডের তেরেসা মে- সব  রথী মহারথী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু নিধন সমর্থন দিচ্ছে।

তাহলে বুঝা গেল রোহিঙ্গারা মানুষ নয়।
ওরা পোকামাকড়।
ওদের মারতে কোনো অসুবিধে নেই।
ওদের হত্যা করাটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ নয়।

কিন্তু, রোহিঙ্গারা মানুষ নয় কেন?
কেন?
কেন?
কারণ, ওরা মুসলিম।

আর ঠিক একই কারণে ফিলিস্তিনে, ইরাকে, সিরিয়ায়, লিবিয়ায়, আফগানিস্তানে, বসনিয়ায়, চেচনিয়ায় যখন মুসলিমরা নির্যাতিত, নিপীড়িত হচ্ছে- তখনো বিশ্বব্যাপী কোনো প্রতিক্রিয়া দেখি না। খবরের পাতার ভেতরের দিকে ছোট্ট করে এর শিরোনাম হয়।

ওয়াদুদ খান
সদরপুর, ফরিদপুর
০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭


Share:

নির্যাতিত, নিপীড়িত, অসহায় রোহিঙ্গা মুসলিম


রোহিঙ্গা আদিবাসী জনগোষ্ঠী পশ্চিম মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি উলেখযোগ্য নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী। এরা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত। রোহিঙ্গাদের আলাদা ভাষা থাকলেও তা অলিখিত। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার কাছাকাছি তাঁদের ভাষা। মায়ানমারের আকিয়াব, রেথেডাং, বুথিডাং, মংডু, কিয়কতাও, মামব্রা, পাত্তরকিল্লা, কাইউকপাইউ, পুন্যাগুন ও পাউকতাউ এলাকায় এদের নিরঙ্কুশ বাস। এছাড়া মিনবিয়া, মাইবন ও আন এলাকায় মিশ্রভাবে তাঁরা বসবাস করে থাকে। ২০১২ সালের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৮,০০,০০০ রোহিঙ্গা মায়ানমারে বসবাস করে। মায়ানমার ছাড়াও ৫ লক্ষের অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এবং প্রায় ৫ লাখ সৌদিআরবে বাস করে বলে ধারনা করা হয়। বিভিন্ন সময় তাঁরা মায়ানমার সরকারের নির্যাতনের কারণে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। জাতিসংঘের তথ্যমতে, রোহিঙ্গারা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত ও রাষ্ট্রবিহীন জনগোষ্ঠী।

রোহিঙ্গারা মূলত একটি স্বতন্ত্র মুসলিম জনগোষ্ঠী। তারা মুসলিম ব্যবসায়ী হিসেবে প্রায় এক হাজার বছর আগে মায়ানমারে বসবাস শুরু করে।

অষ্টম শতাব্দীতে আরবদের আগমনের মধ্য দিয়ে আরাকানে মুসলমানদের বসবাস শুরু হয়। আরব বংশোদ্ভূত এই জনগোষ্ঠী মায়্যু সীমান্তবর্তী অঞ্চলের (বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের নিকট) চেয়ে মধ্য আরাকানের নিকটবর্তী ম্রক-ইউ এবং কাইয়্যুকতাও শহরতলীতেই বসবাস করতে পছন্দ করতো। এই অঞ্চলের বসবাসরত মুসলিম জনপদই পরবর্তীকালে রোহিঙ্গা নামে পরিচিতি লাভ করে।

তাহলে, এটা স্পষ্ট যে, রোহিঙ্গারা মায়ানমারে হাওয়া থেকে কিংবা পানিতে ভেসে আসেনি। শতাব্দীর পর শতাব্দী তাঁরা মায়ানমারে বসবাসরত। একটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে তাঁদের সকল মানবাধিকার বঞ্চিত করে জোরপূর্বক জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে। বিশ্ববিবেক এখানে নিরব, নিস্তব্দ। 

নিরীহ, নিরস্ত্র রোহিঙ্গা জনতা
 

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বলা হয় "বিশ্বের সবচেয়ে কম প্রত্যাশিত জনপদ" এবং "বিশ্বের অন্যতম নিগৃহীত সংখ্যালঘু"। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনের ফলে তারা নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হন। তারা সরকারি অনুমতি ছাড়া ভ্রমণ করতে পারে না, জমির মালিক হতে পারে না এবং দুইটির বেশি সন্তান না নেওয়ার অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অনুসারে, ১৯৭৮ সাল থেকে মায়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গারা মানবাধিকার লংঘনের শিকার হচ্ছে এবং তারা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে- ২০০৫ সালে, জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে, কিন্তু রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বিভিন্ন ধরণের মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে এই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। অানান কমিশন, শান্তিতে নোবেলজয়ী ও গণতন্ত্রেরর মানসকন্যা অং সান সুচি ২৪ অাগস্ট ২০১৬ গঠন করেন রোহিঙ্গা বিষয়ক 'রাখাইন উপদেষ্টা কমিশন' নামের ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি অান্তর্জাতিক কমিশন।

রোহিঙ্গাদের চলাচলের স্বাধীনতা ব্যপকভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং তাদের অধিকাংশের মায়ানমারের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে। তাদের উপর বিভিন্ন রকম অন্যায় ও অবৈধ কর (ট্যাক্স) চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের জমি জবর-দখল করা, জোর-পূর্বক উচ্ছেদ করা, ঘর-বাড়ি ধ্বংস করা এবং বিবাহের উপর অর্থনৈতিক অবরোধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও উত্তর রাখাইন রাজ্যে গত দশকে বাধ্যতামূলক শ্রমিকের কাজ করা কমেছে তারপরও রোহিঙ্গাদের রাস্তার কাজে ও সেনা ক্যাম্পে বাধ্যতামূলক শ্রমিকের কাজ করতে হচ্ছে।

মায়ানমারের সামরিক জান্তা থেকে শুরু করে বর্তমানের তথাকথিত নোবেল বিজয়ী অং সান সুচি পর্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেবার ব্যবস্থা করেছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এমন সন্ত্রাস বিশ্ব এর আগে কখনো দেখেনি। নিরীহ নারী ও শিশু সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার। মৃত্যু ওখানে সহজ ও নিয়মিত। বেঁচে থাকা বড্ড কঠিন ও বিস্ময়কর। 'পান থেকে চুন' খসলেই রোহিঙ্গাদের উপর নেমে আসে নির্যাতনের সাইক্লোন। বাড়িঘর ভেঙে করা হয় চুরমার। গ্রামের পর গ্রাম করে ফেলা হয় জনশূন্য।

১৯৭৮ সালে মায়ানমার সেনাবাহিনীর 'নাগামান' ('ড্রাগন রাজা') অভিযানের ফলে প্রায় দুই লক্ষ (২০০,০০০) রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। সরকারিভাবে এই অভিযান ছিল প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং যে সব বিদেশী অবৈধভাবে মায়ানমারে বসবাস করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এই সেনা অভিযান সরাসরি বেসামরিক রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চলছিল এবং ফলে ব্যাপক হত্যা, ধর্ষণ ও মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ঘটে।

১৯৯১-৯২ সালে একটি নতুন দাঙ্গায় প্রায় আড়াই লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। তারা জানায় রোহিঙ্গাদের বার্মায় বাধ্যতামূলক শ্রম প্রদান করতে হয়। এছাড়া হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণের স্বীকার হতে হয়। রোহিঙ্গাদের কোনো প্রকার পারিশ্রমিক ছাড়াই কাজ করতে হতো।

আমাদের দেশের কিছু জ্ঞানপাপী, তথাকথিত মানবতাবাদী রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসীগোষ্ঠী হিসেবে প্রমাণ করতে ব্যস্ত। যেহেতু রোহিঙ্গারা মুসলিম (মুসলিম মানেই নাস্তিকদের দৃষ্টিতে জিহাদি, জঙ্গী, সন্ত্রাসী), সেহেতু ওঁদের রক্তপানে বৌদ্ধদের বাধা নেই। একটি গোষ্ঠীর কিছু লোক বিপথগামী হলেও, সেই গোষ্ঠীর সকলকে কচু কাটা করার অধিকার কি কারও বা কোনো গোষ্ঠীর আছে?

বাংলাদেশ সরকারের উচিত জাতিসংঘের মাধ্যমে (অন্যান্য শক্তিশালী দেশসমূহের সহায়তায়, বিশেষকরে ইসলামি দেশগুলো)  মায়ানমারের উপর অব্যাহত চাপ তৈরি করা। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মায়ানমারকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে , বাংলাদেশকে আঙুল বাঁকা করতে হবে (মায়নমারকে কড়া হুঁশিয়ারি দিতে হবে)। 

বাংলাদেশ এমনিতেই নিজস্ব জনসংখ্যার ভারে ভারাক্রান্ত। সেখানে কয়েক দশক ধরে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে, যা বাংলাদেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য হুমকিস্বরূপ। রোহিঙ্গারা জলে ভেসে আসা কচুরিপানা নয়, তাঁরা মায়ানমারের জন্মসূত্রে নাগরিক (যদিও মায়ানমার সরকার তাঁদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না)। এখনই সময়- মায়নমারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করা। রোহিঙ্গাদের মায়ানমারের মূল স্রোতে মিশতে দিতে হবে। তাঁদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। নিজস্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি পালনের সুযোগ দিতে হবে। শান্তিতে নোবেলপ্রাপ্ত সুচিকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাধ্য করতে হবে।   

লেখা ও গবেষণা - ওয়াদুদ খান
কবি ও কথাশিল্পী 
৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

তথ্যসূত্র
উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য অনলাইন জার্নাল


Share:

Popular Posts

Recent Posts